অনেক দিন ধরে ভাবছি ১০০ সিসির সেগমেন্ট নিয়ে কিছু লিখি। কারন ১০০ সিসির বাইক নিয়ে খুব একটা লিখা লিখি হয় নাহ।
প্রতি দিনের চলাচল এর জন্য শহরে বাহ গ্রাম এর রাস্তায় কম খরচে চলা-চলার জন্য ১০০ সিসি বাইক আমরা কিনে থাকি।আমি মূলত বাইকের
শক্তি, মাইলেজ, ব্রেকিং, লুকিং কোন বাইকে ভাল আছে সেটা তুলে ধরার চেস্টা করব । আমি নিজেই একটা ১০০ সিসি বাইক চালায়। সাথে অনেক ১০০-১১০ সিসির বাইক চালানোর সুযোগ হয়েছে, তার ভিতর থেকে আমি আজ ৩ টি বাইক নিয়ে আলোচনা করব।
১।হোন্ডা লিভোঃ
হোন্ডা লিভো হোন্ডার প্রিমিয়াম সেগমেন্ট এর ১১০ সিসির বাইক। ২০১৮ সালে এই বাইক টি প্রথম বাজারে আনে হোন্ডা । দেখতে সুন্দর, স্টাইলিশ আর আসাধারন মাইলেজ। বিশেষ করে যারা কমিউটর সেগমেন্ট এ একটা স্টাইলিশ বাইক খুজতেছেন তাদের জন্য প্রথম পছন্দ হতে পারে এই হোন্ডা লিভো। বাইক টি তে থাকছে সিংগেল সিলিন্ডার ১০৯.১৯ সিসি, এয়ার কুলড, ৪ স্টোক ২ভাল্ভ, এস আই (SI engine with Honda Eco Technology (HET)) একটা ইঞ্জিন যার ম্যাক্স পাওয়ার হইতেছে ৮.২৫ বি এইচ পি ৭৫০০ আর পি এম।যার ম্যাক্স টর্ক ৮.৬৩ (NM) ৫৫০০ । এছাড়া বাইকটিতে থাকছে ৪ টি গিয়ার সাথে হোন্ডার ইকো টেকনোলজি (HET)। বাইকটির ওজন ১১১ কেজি।
বাজার মূল্যঃ ১১১০০০ টাকা(ডিস্ক) ১০৫০০ টাকা(ড্রাম) ১১৬০০০ টাকা (ডিজিটাল ডিস্ক)
ব্যক্তিগত মতামতঃ বাইকটিতে
রেডি পিকাপ টা আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে, সাথে সামনের হেডলাইট এর ডিজাইন ও ফুয়েল ট্যাংকির
সাথে যে কিট লাগানো আছে তা আমার নজর কেড়েছে, বাইকটিতে শহরে মাইলেজ
পাওয়া যাই -৫৫-৬০ এর মাঝা মাঝি আর হাইওয়েতে
আরো বেশি পাওয়া যায়, তবে মাইলেজ অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে সেটা
নাহ হয় অন্য একদিন লিখব। বাইকটির সব থেকে ভাল লেগেছে এটার পাওয়ার আর বিল্ড কোয়ালিটি
এক কথায় অসাধারন। বাইকটির ২টা ভেরিয়েন্ট এ
পাওয়া যায়। ড্রাম ব্রেক ও ডিস্ক ব্রেক। আমি পারসোনালী আপনাকে ডিস্ক ব্রেক টা নিতে
বলব। ব্রেকিং টা তাহলে ভাল পাওয়া যাবে। বাইকটিতে সামনে পিছনে থাকছে ৮০-১০০-১৮ টিউবলেস
টায়ার ।
তবে বাইকটির কিছু জিনিস আমার ভাল লাগে নাই তার ভিতর ১ টি
হইতেছে বাইকটির পিছনের চাকার সাইজ ৮০-১০০-১৮ সাইজ এর চাকা কিন্তু অনেক বেশি চিকন
মনে হবে। বাইকের সামনের মিটার টা এনালগ দেয়েছে যাহ আমার কাছে খুব একটা ভাল লাগে
নাই। যদি সেমি ডিজিটাল দিত তাহলে আই প্রাইস এর সাথে মানানসয় হত।
ডিস্কভার ১১০ সিসিঃ বাংলাদেশে
ডিস্কভার ১০০ সিসির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। একটু গ্রামের দিকে গেলেই ডিস্কভার ১০০
সিসি অনেক বেশি চোখে পড়বে। বাজাজ এর কমিউটর সেগমেন্ট এর বাইক ডিস্কভার ১১০ সিসি।
আগের ১০০ সিসি কে আপগ্রেড করে ১১০ সিসি বানানো হয়েছে। বাইক টি তে সিংগেল সিলিন্ডার ২ ভালভ ১১৫.৫ সিসির
একটি শক্তিশালী ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে যার ম্যাক্স পাওয়ার ৮.৪৬ বি এইচ পি @ ৭০০০ আর পি
এম , ম্যাক্স টর্ক ৯.৮১ এন .এম @ ৫০০০ আর পি এম।
বাইকটি তে মাইলেজ কোম্পানি বলে ৮২ কিলো প্রতি লিটার পেট্রল এ। কিন্তু বাস্তবে
আপনি অনায়াসে ৫৫+ পাবেন। বাইকটিতে এনালগ- ডিজিটাল মিটার দেয়া হয়েছে এছাড়া আগের মডেল
এর একটা কমন সমস্যা ছিল তা হল একটু উচু নিচু যায়গায় পড়লেই বাইকের চেইন এ সাউন্ড হত
এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এই বাইকে। বাইকটি প্রথম চালানোয় মনে হবে নাহ আপনি ১১০
সিসির কোন বাইক চালাসছেন মনে হবে ১২৫ সিসির বাইক চালাসছেন । এছাড়া বাইকটিতে সামনের
চাকাতে ২.৭৫ x ১৭ সাইজ এর টায়ার দেয়া হয়েছে এবং পিছনের চাকা তে ৩.০০ x ১৭ সাইজ এর টায়ার দেয়া
হয়েছে যার দুইটির টিউব্লেস। বাইকটির ওজন ১২০ কেজি । এই বাইকটির ফুয়েল ট্যাংক এ
ফুয়েল ধরে ৮ লিটার। বাইকটির সব চেয়ে ভাল লাগার জিনিস বাইকটি যখন আপনি চালাবেন খুব
কম ভাইব্রেশন অনুভব করবেন। সামনে ও পিছনে
ড্রাম ব্রেক দেয়া হয়েছে , ড্রাম ব্রেক হলেও আপনি ভালো ব্রেকিং পাবেন । বাইকটিতে
স্লেফ ও কিক স্টার্ট এর সুবিধা রয়েছে। এছাড়া বাইকের সামনে হেডলাইট এর দুই পাসে দুইটা এল ই ডি দেয়া হয়েছে যাহ সব সময় জ্বলে থাকে(AHO) , এটা আপনাকে
হাইওয়ে তে অনেক সুবিধা দিবে, এটা একটা সেফটি ফিচার বড় বড় গাড়ি গুলো আপনাকে দূর
থেকে দেখতে পারবে।বাইকটির সিট অনেক সুন্দর , হ্যান্ডেল এর সাথে সুন্দর ভাবে
এডজাস্ট করা রয়েছে যার কারনে অনেক ক্ষন ধরে বাইক চালালেও আপনার কোমর বাহ হাতে
ব্যাথা হবে নাহ । বাইক টিতে আপনি সব কিছুই
ভাল পাবেন তবে উত্তরা মটরস এর সার্ভিস নিয়ে কেউ সন্তুষ্ট নাহ। তারা শুধু বাইক সেল
করেই শেষ। আর আপনি যদি মাইলেজ এর কথা চিন্তা করেন তাহলে বাজাজ এর প্লাটিনা দেখতে
পারেন। এই বাইকে আপনি মাইলেজ নিয়ে খুব একটা খুশি হতে পারবেন নাহ ।
বাজার মূল্যঃ ১১৯,৫০০ টাকা।

টিভিএস মেট্রো প্লাস ১১০ সিসিঃ টিভিএস
মেট্রো প্লাস ১১০ টিভিএস এর প্রিমিয়াম কমিউটর
সেগমেন্ট এর বাইক। আমার এক বন্ধুর সুবাদে এই বাইকটি প্রায় চালানো হয়। বাইকটি দেখতে
যেমন সুন্দর তেমন মাইলেজ ও ব্যালন্স।এছাড়া বাইক টির ব্লিড কুয়ালিটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। মোটামুটি সব সময় ৬০+ মাইলেজ পাই। বাইকটির মিটার
কিছুটা আর টি আর এর ফিল দেয় । বাইক টিতে থাকছে ১০৯ সিসি ৪ স্টোক এয়ার কুলড , ইকো
থ্রাস্ট ইঞ্জিন যাহ অনেক বেশি মাইলেজ দিতে সাহায্য করে। এই বাইকের ম্যাক্স পাওয়ার
৮.৪ বি এইচ পি @৭০০০ আর পি এম।ম্যক্স টর্ক ৮.৭ এন এম @৫০০০ আর পি এম । সাথে থাকছে
৪ স্পেড গেয়ার বক্স। বাইক টির সামনে ও পিছনে থাকছে ২.৭৫ x ১৭ ও ৩.০০ x ১৭ সাইজ এর টিউব টায়ার । বাইকটি আপনি দুই টা ভ্যারেন্ট এ পাবেন ১.ড্রাম
ব্রেক ও ডিস্ক ব্রেক । সামনে HS1-12V, 35/35W ওয়াট এ হ্যালোজেন বাল্ব ।
বাইকটির ওজন ১০৯কেজি । বাইকটিতে আপনি অনেক ভাল মাইলেজ পাবেন । তবে আমি একটা সমস্যা
পেয়েছি বাইকটিতে সেটা হল হাই স্পেড এ বাইকটি অনেক হালকা হয়ে যায়। মনে হয় বাতাশে
উড়তেছি আমি। এছাড়া ভালই ভাইব্রেশন দেয়
শরীর এ । এর সিট অনেক চওড়া যার কারনে রাইডার এর বসে থাকতে তেমন সমস্যা হবে নাহ এবং
সহ যাত্রী ও খুব আরামে বসে যেতে পারে। বাইক টি অনেক ক্ষন ধরে চালালে ব্যাক পেইন হয়
এছাড়া হাতেও ব্যাথা করে।
বাজার মূল্যঃ ১১০৯০০ টাকা(ডিস্ক) ১০৩৯০০ টাকা(ড্রাম) ১০৬৯০০
টাকা (ডুয়েল টোন )
এই ছিল আমার দেখা সেরা তিন টি বাইক। তবে অনেক এক একটা বাইক এক এক ধরনের জন্য
সেরা। পছন্দ আপনার উপর।
হেলমেট ব্যবহার করুন । সাবধানে রাইড করুন।
Comments
Post a Comment